না বলা গল্প
তৃতীয় পর্ব - ম্যানিপুলেশন

প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র মেধাসত্ত্ব চুরি এবং ‘শিক্ষক’ ডক্টর রুহুল আমিনের মুখোশ উন্মোচন - তৃতীয় পর্ব

আজকের গল্প ম্যানিপুলেশন আর গ্যাসলাইটের গল্প। কীভাবে ‘শিক্ষক’ রুহুল আমিন আমাদের পিপীলিকার কৃতিত্ব নিজের করে নিতে কূটচাল দিয়ে গেছে। আমরা শুরুতে বলে রাখতে চাই, শাবিপ্রবি বা শাবিপ্রবি সিএসই বিভাগের বিরুদ্ধে আমাদের ক‌োন অবস্থান নেই এবং একজন রুহুল আমিন শাবিপ্রবি সিএসইর অন্যান্য শিক্ষকদের রিপ্রেজেন্ট করে না। আমরা এই আইপি ডাকাত রুহুল আমিনের বিষয়ে পরবর্তী জেনারেশন এবং সাস্টের ভেতরের বাইরের সবাইকে সচেতন করতে চাই। যাতে নতুন জেনারেশনের ছাত্র-ছাত্রীরা আর এরকম অ্যাবিউজ, ম্যানিপুলেশন এবং গ্যাসলাইটিংয়ের স্বীকার না হয়। আমাদের অনুজ আর কাউকে যাতে এই ধরনের বন্ধুর পথ ও ট্রমার ভেতর না যেতে সেই জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।

সিলেট ডিভিশনাল আইটি ফেয়ারে সজীবের লুকোচুরি

পিপীলিকা ২০১০ ডিসেম্বরে যখন সিলেট ডিভিশনাল আইটি ফেয়ারে পার্টিসিপেট করলো, আমাদের তখন ৪-২ এর ফাইনাল চলে মনে হয়। কিন্তু আমাদের প্রজেক্ট যে আইটি ফেয়ারে শোকেস হচ্ছে, এটা ‘শিক্ষক’ রুহুল আমিন আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি!!! খুবই অস্বাভাবিকভাবে ‘শিক্ষক’ সজীব ভাই আমাদেরকে কিছু না জানিয়ে ৩য় বর্ষের ছোটভাই সুদীপ্ত, নাইম ও রুবেলকে দিয়ে পিপিলিকার স্টলে বসিয়ে রাখলেন। ফেয়ারের শেষ দিন সন্ধ্যার পরে ফোন দিয়ে জানালেন- “চিশতী তোমরা এখনি ক্যাম্পাসে আসো, আমরা ফার্স্ট প্রাইজ পাইছি।” তখন ছোট ছিলাম অনেক- আর কিছু না হোক যে কোন এচিভমেন্ট বড় লাগত, ফোকাস পাইলে ভালো লাগতো। গেলাম ফেয়ারের লোকেশনে। শেষ দিন ছিল। মন্ত্রী নিজে নাকি মেডেল / ক্রেস্ট দিয়েছে যেটা নিতে স্টেজে গিয়েছিলো স্টল থাকা জুনিয়ররা; শুধু আমরাই ওখানে নাই। যেখানে আমাদের বানানো পুরো প্রোজেক্ট! যেয়ে দেখি সবাই বাঁশ তুলে নিচ্ছে, স্টল খুলছে। কী আর করার; অগ্যতা ওখানেই কয়েকটা ফটোসেশন করলাম।

এর পর ভার্সিটিতে এসে জাফর স্যারের হাতে ক্রেস্ট দিয়ে আরো কিছু ছবি তুলি, যেটা পরে মাসিক কম্পিউটার জগতের কভারে ছাপা হয়েছে। সেখানে আমাদের ছবি আসে; নাম ছাপা হয়। তখন বুঝতে পারিনি, কিন্তু বেশ পরে ধরতে পেরেছিলাম, যে ‘শিক্ষক’ রুহুল আমিন সজীব কখনোই চায়নি যে পিপীলিকাতে আমাদের চেহারা বা নাম সামনে আসুক। প্রতিবারই কোনও না কোনওভাবে উনি আমাদের সাইডলাইন করেছেন দিনের পর দিন। একমাত্র আমরাই জানি পুরো জিনিসটা কীভাবে কাজ করে, কারণ এটা আমাদের নিজের হাতে বানানো। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে পিপিলিকাতে আমাদের কন্ট্রিবিউশন লুকাতে, কারণ আমাদের বাদ দিলে তখন একমাত্র তারই কিছু ধারণা আছে পিপীলিকা সম্পর্কে। বাকিদের তো তখন সেটুকু ধারণাও নেই। পিপীলিকা সবার কাছে একটা ব্ল্যাক বক্স মাত্র! তাই একমাত্র আমাদেরকে সাইড করতে পারলেই পিপীলিকার owner বা মাথা হয়ে ওঠা তার জন্য পসিবল।

Computer Jagat

Computer Jagat

সজীব ছিল না শুধু শিক্ষক - ছিল বড় ভাইয়ের মতো

একটু অন্য প্রসঙ্গে বলি- এসবের মাঝে ‘শিক্ষক’ সজীব ভাইয়ের সাথে আমার (চিশতীর) সম্পর্ক খুব ভাল হয়ে গেছিল। আমরা এক সাথেই থাকতাম বেশির ভাগ সময়। একে অন্যের পার্সোনাল বিষয় জানতাম, এবং সাহায্যও করতাম বড় ভাই- ছোট ভাইয়ের মতন।

গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বারণ

কিন্তু আমাদের ‘পিপীলিকা’র প্রথম রেকোগনিশন; সিলেট ডিভিশনাল অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার পর তার আচরণ পরিবর্তিত হতে থাকে। আমরা ছোট ছিলাম আর সে আমাদের মাথায় ঢুকাইলো যে - ভিতরের আইডিয়াটা রিকোগনিশন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ যেন না জানে।

যাহোক এর পর থেকে সে আমাদের কথা বলার ওপর রেস্ট্রিকশন চালু করল। সবার সাথে সব কিছু বলা যাবে না। আমাদের “ফোকাস থাকতে হবে”, “ফোকাস, ফোকাস, ফোকাস, ফোকাস, ফোকাস” এইটাই শুনেছি শুধু এরপর। একদিন এক সাংবাদিক বুরহানের মোবাইলে ফোন দিলো। বুরহান ঠিকমত বুঝে উঠার আগেই ফোনেই একটা ছোটখাটো ইন্টারভিউ-এর মত দিয়ে ফেললো। প্রশ্ন উত্তর আর কী। কয়েকদিন পরে খুবই ছোট একটা কলাম ছাপিয়েছে কোনও এক পত্রিকাতে, সেটা দেখে সেদিন সকালেই ‘শিক্ষক’ সজীব ভাই বুরহানকে ফোন দিয়ে অনেক ঝাঁড়ি দিল। খুব খারাপ আচরণ শুরু করল আমাদের সাথে এই বলে যে- আমরা কী জানি কীভাবে কথা বলতে হয়? কীভাবে সাংবাদিক হ্যান্ডল করতে হয়? আমরা ছোট, আমাদের কাজে মন দিতে হবে। যা কথা বলার সে নিজে বলবে সাংবাদিকদের সাথে। আমাদের ভুলভাল বুঝ দিয়ে লাইমলাইট এর থেকে সে নিজের দিকে যে নিয়ে আসতে চায় - সেটা বুঝিনি।

সব জায়গায় শুধু সজীবের নাম

এর পরে, সজীব ভাই অনেকগুলা জায়গায় ইন্টারভিউ দেয় এবং তার নাম দলনেতা, লিডার বা শুধুই তার নাম আসতে থাকে। একদিন এক পত্রিকায় ‘পিপীলিকা’ নিয়ে একটা কলাম ছাপা হল। সেখানে লেখা সজীবের নেতৃত্বে ও এক ঝাক শিক্ষার্থীর পরিশ্রমে পিপীলিকা আজ এখানে। সেই ঝাক হচ্ছি আমরা দুইজন মাত্র অথচ আমাদের কোথাও কোন নাম নাই। আমরা জিজ্ঞেস করলাম যে এখানে আমাদের দুই জনের টিমে আপনি দলনেতা হইলেন কিভাবে? আপনি তো আমাদের থিসিস প্রজেক্টের সুপারভাইজার। সে বলে- “আরে তোমরা তো জানো এসব সাংবাদিকদের, এদের বলবা এক, লিখবে আরেক। আমি কিছুই বলি নাই এইসব।”

চিশতী ও বুরহানকে ছাড়া পিপীলিকা ছিল ব্ল্যাকবক্স

আমাদের বাংলা বানান চেক করার জন্য একটা স্পেল চেকার দরকার ছিল। আমরা ০৪ ব্যাচের ভাইদের স্পেল চেকার এলগোরিদমটা অ্যাড করি আমাদের সার্চ ইঞ্জিনে- যেটা ভুল ওয়ার্ডের জন্যও সাজেশন দিতো। তখন, একটা রানিং প্রোটোটাইপ রেডি বাংলা সার্চ ইঞ্জিনের জন্য- যেটা i) ক্রল করে, ii) ডেটা পার্স করে জেনেরিক পার্সার দিয়ে, iii) ক্যাটাগোরাইজ করে, iv) র‍্যাংকিং করে, v) ইনডেক্সিং করে, vi) সার্চ করে বাংলা টেক্সট Lucene Analyzer দিয়ে হাইলাইট করে, vii) ভুল শব্দ ডিটেক্ট করে। এর মাঝে ক্রলার এবং স্পেল চেকার ০৪ ব্যাচের কাছ থেকে নেয়া। বাকি সব জিনিস আমাদের নিজের সলভ করা এবং আমাদের হাতেই বানানো। বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা প্রথম রান করে আমাদের হাত ধরেই, নিউজ হয়, মানুষকে স্বপ্ন দেখায় ‘পিপীলিকা’ ওই সময়ে আমি, আর বুরহান বাদে কেউ পুরা প্রজেক্টের একটা লাইনও কোড জানতো না, বুঝতো না - পুরোপুরি ব্ল্যাক বক্স। আমি / বুরহান না থাকলে পিপীলিকা থাকতই না।

কৌশলে পেপারে প্রথম অথারশিপ নেয়ার চেষ্টা

একদিন চা-এর টং এ ডেকে নিয়ে গিয়ে ‘শিক্ষক’ রুহুল আমিন সজীব বলেন- তোমরা তো দেশের বাইরে পি এইচডি করতে চাও না, গবেষণাপত্রে আমার নাম ১ম অথর হিসেবে দিলে কোন আপত্তি আছে? আমরা রাজি ছিলাম না। আমাদের মনে আছে সজীব ভাই আমাদের এই বলে উৎসাহ দিতেন যে একটা ভালো পেপার বের হলে কার নাম আগে আসবে? আমার নাম না তোমাদের? সেই তিনি যখন আগে নাম দিতে চাইলেন তখন বুরহান সেই আগের কথা রেফার করে বলল কিন্তু ভাইয়া আপনি তো বলতেন আমাদের নাম আগে আসবে। এখন আপনি কেন আগে দিতে চাইছেন? তিনি উত্তর দিতে পারেন নি। বুরহান তাকে খুশি রাখার জন্য এটাও বলেছিল আমরা এলফাবেটিকালি দেই, এবং মেনশন করে দেই যে এলফাবেটিকালি দেয়া। সজীব ভাই বেশ রেগে গিয়ে বলে - ওকে আমরা একদম ফাইনালি পেপারটা পাব্লিশ করবো। এবং এর পরে আমরা নিজে যখন লিখতে গেছি - ওই ড্রাফটের ভুল ধরে ধরে অলমোস্ট পুরা লেখাটাই মুছে ফেলছে কয়েকবার। বার বার সে আমাদের লেখা কিছুই হয় নাই বলে মুছে দেয়। কিছুই লেখা হয় না আমাদের। এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের পেপার লেখাও হয় নাই আর।

NCSC (২০১১), অতঃপর ফান্ডিং

পিপীলিকা এরপর National Collegiate Software Contest এ ১ম পুরস্কার পায়। এই প্রথম আমাদের প্রজেক্ট জাতীয়ভাবে রেকগনিশন পেল। তখন GPIT (গ্রামীন ফোন আইটি) আগ্রহী হয় প্রজেক্টে(অক্টোবর ২০১১)। তারা ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে এবং প্রজেক্টটা ডিটেইল দেখতে/বুঝতে চায়। তখন আমরা মাত্র পাশ করে চাকুরীতে ঢুকেছি। সজীব ভাই ফ্রন্টে চলে আসে। সে কথা বার্তা শুরু করে; তবে টেকনিকাল ডিটেইল সব আমরাই জানি তখনও। আমি, বুরহান আর সজীব ভাই ১ম কয়েকটা রাউন্ড মিটিং করি GPIT-এর সাথে(এগুলোর মেইল থ্রেড এক্সিস্ট করে; ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এখনও বিদ্যমান)। আমাকে আর বুরহানকে দিনের পর দিনে GPIT অফিসে যেয়ে যেয়ে ওদের Infrastructure এ পিপীলিকার পুরো সিস্টেম রান করতে হয়েছে যাতে জিপিআইটির টিম টেস্ট করতে পারে। এর পরে আচমকা মিটিংগুলাতে আমরা আর ডাক পাইনা। আমরাও বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম, কারণ সজীব ভাই তো যাচ্ছে আমাদের হয়ে!!!!

আমাদের প্রজেক্টে অন্য একজন টিম লিড?

এর পরে একদিন শুনি যে GPIT সার্চ ইঞ্জিনে ইনভেস্ট করবে কনফার্ম। সজীব ভাই আমাদের কল করে বলে- "পিপীলিকাতে জয়েন করো ডেপুটি টিম লিড হিসেবে, আমরা প্রজেক্ট পেয়ে গেছি। আর ০৪ ব্যাচের মিশুকে আনাচ্ছি টিম লিড হিসেবে।" আমি যখন জিগাইলাম- পুরা প্রজেক্ট আমাদের করা, আমরা কেন এমন একজনের আন্ডারে কাজ করবো যার সাথে আমাদের বনিবনা নাই ? সে উত্তর না দিয়ে কত টাকা দিবে মাসে এইটাকে ফোকাস করতেছিল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিষয়টা বাজেভাবে টার্ন নেয়। সে বলে আমাদের ছাড়াই পিপীলিকা রান করাবে!!!

কী চাও? টাকা?

এর পরে যখন আমরা এক সাথে বসলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম- এই প্রজেক্টে আমরা শুধু ভার্সিটির কোর্স পাশ করার জন্য করি নাই। আমাদের ইনভলভমেন্ট অনেক অনেক বেশি। পুরা ১.৫ বছর পাগলের মত খাটলাম, আমাদের কোন রিকগনিশন নাই? সে রেগে গিয়ে বলে “কী চাও? টাকা?” না, আমরা টাকা চাই নাই, চেয়েছিলাম রিকগনিশন, পিপীলিকা আমাদের ব্রেইনচাইল্ড। পিপীলিকা কিভাবে এল কেউ জানতে চাইলে যেন বলেন এইদুইজন গত কয়েক বছরে অনেক অনেক খাটাখাটি করে করে এটা দাঁড় করিয়েছে, এখানে অন্যদেরও কন্ট্রিবিউশন আছে, কিন্তু এরা সব কিছুকে একসুত্রে এনে এটাকে ফাংশনাল সার্চ ইঞ্জিনের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এর উপরে কাজ করে ‘পিপীলিকা’কে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মানে সোজা কথা আমাদের রিকগনিশন করুক। পিপীলিকা তো অবশ্যই ডিপার্টমেন্টের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আর আমরাও আমাদের ক্যারিয়ারে এত বড় একটা কাজের স্বীকৃতি পাব।

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি

আমাদের শেষ ডিসকাশন অনুযায়ী সে বলেছে- দেখো, ভার্সিটি বেনিফিটেড হবে পুরাটা, তোমাদের কাজটা তো ভার্সিটি ওউন করে। কাজটা এখন মোমেন্টাম পাচ্ছে, আর কিছু দিন ধৈর্য ধর। যেহেতু আমরা এখনই এটাকে পাবলিকলি ওপেন করে দিচ্ছি না, এটার ১ম ভার্সন রিলিজের সময়ে বড় করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সেখানে আমরা যে যতটুকু পাওয়ার যোগ্য, তাকে সেভাবেই রিকোগনাইজ করবো।

পিপিলিকার বিশাল ফান্ডডেড টিম, ইনফ্রাস্টাকচার ও নলেজ ট্রান্সফার

এর পরে পিপীলিকাতে বিশাল একটা টিম হয়েছে। দামী সব রিসোর্স কেনা হয়েছে। অনেক রিসার্চ হয়েছে, ছিল অনেক মাসিক বেতন নেয়া রিসার্চার ও ডেভেলপার। সবাই পিপীলিকাতে জব করত। তখনও পিপীলিকা এর এই টিমের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিল। প্রথম দিকে আমাদেরকেই আমাদের কোড বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। কীভাবে রান করাতে হয় ট্রেইন করে আসতে হয়েছে। আমাদের ভার্সন থেকেই তারা নলেজ গ্যাদার করেছে যে কিভাবে পুরা জিনিসটা কাজ করানো যায়। এইসব কিছুরই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এখনও বিদ্যমান। ১১ সালের শেষ দিক থেকে এইসব নলেজ শেয়ারিং করতে থাকি আমরা এবং আমরা ভিন্ন ফুলটাইম জব করার পরেও তা চলমান থাকে।

উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের অপমান

এর পরে বেশ কিছু সময় যায়। শেষের দিকে সজীব ভাইয়ের কথা বার্তা কেমন যেন ভালো লাগতো না। আমরা পাশ করার দুই বছর পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে শেরাটনে পিপীলিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। সজীব ভাই বলেছিল যে সবাই তার প্রাপ্য রিকগনিশন পাবে। সেদিন অনুষ্ঠানে বলা হয় যে - সজীব এবং তার টিম বাংলার প্রথম সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা ডেভেলপড করল, পাওয়ার্ড বাই জিপিআইটি। আর এই প্রজেক্টের নাম আর লোগো নেয়া হয়েছে সাস্টের একটা প্রজেক্ট থেকে!!!!

সেদিন আমরা বোবা হয়ে গেছিলাম, কী করব বুঝেও উঠতে পারছিলাম না। তারা এটা কীভাবে বলে? কোথা থেকে জিপিআইটি এই আইডিয়া পেল যে বাংলা সার্চ ইঞ্জিন একটা বানানো যায়? আর বানানো আদৌ সম্ভব? হাওয়া থেকে আসছে? আমাদের কাজের থেকে স্টেম করে এতকিছু আসলো?!

২০২১ এ ডিপার্টমেন্টের কাছে সজীবের আইপি রাইটস দাবি

মজার ব্যাপার হল, ২ বছর আগে জানতে পারি রুহুল আমিন সজীব পিপিলিকা তার একার ইনভেনশন হিসেবে দাবী করেছে কিছু জায়গায়। এইটা দেখে আমাদের টনক নড়ে। আমরা জানতাম পিপীলিকা দিয়ে সাস্ট এর সিএসই ডিপার্টমেন্ট বেনিফিটেড হচ্ছে। যেহেতু ব্যক্তিগত কোন স্বার্থে লাগছে না, আমাদের পক্ষ থেকে কোন সমস্যা ছিল না। পিপীলিকা তো ভার্সিটিকেই দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এত দিন পরে যদি সজীব ভাই পিপীলিকাকে নিজের একার ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি বলে দাবি করে তাহলে তো তাকে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও চোর বলতেই হয়।

এটা রুহুল আমিন সজীবের একার ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি কিভাবে? এইটা তো আমাদের ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি। আমাদের ৩য় বর্ষের ডেটাবেজ প্রজেক্ট থেকে আমরা এবং শুধুই আমরা খেটে একটা রানিং প্রোটোটাইপ বানিয়েছিলাম যেটাতে কিছু ফিচার ছিল যা তখন গুগোলেও ছিলো না। ইভেন আমরা ভুল শব্দ দিয়ে সার্চ করলে আমাদের সার্চ ইঞ্জিন সঠিক শব্দের সাজেশন দিত। ওই সময়ে গুগোল নিজেও বাংলাতে এই ফিচার দিতে পারে নাই। (পোস্টে ছবি দেয়া)

রুহুম আমিন সজীব কত বেশি সিজিপিএ পাওয়া টিচার এইটা দেখে জিপিআইটি সার্চ ইঞ্জিনে ইনভেস্ট করে নাই। আমাদের প্রজেক্টের এচিভমেন্ট দেখে, সেটাকে তাদের ইনফ্রাক্সট্রাকচার এ রান করে, টেস্ট করে তারপরে ইনভেস্ট করেছে। সো, আমরা ছিলাম ইনোভেটর। আমাদের নিজেদের আইডিয়া, এবং নিজেদের হাতে করা ইমপ্লেমেন্টেশন। ১.৫ বছর ধরে দিন রাত খাটা ২ জন ছাত্রের পার্সোনাল প্রজেক্টের সাথে লাখ লাখ টাকা বেতন নেয়া ইঞ্জিনিয়ারের বিশাল টিমের কাজ কম্পেয়ার করলে তো হবে না।

একই প্রজেক্ট নতুন করে বানিয়ে আলাদা প্রজেক্ট দাবি (তাও একই লোগো ও নাম রেখে!)

রুহুল আমিন সজীব বলতে চায় যে - "দেখো আমাদের সার্চ ইঞ্জিন আলাদা, এটা অনেক রিসার্চ করে, অনেক পলিশড একটা প্রোডাক্ট। আমরা শুধু তোমাদের থেকে নামটা নিয়েছি"। আমাদের কথা হল- " আলাদা তো হবেই। ওইটা ২ জন ছাত্রের করা নন পেইড রিসার্চ ওয়ার্ক। এইটার সাথে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারদের পেইড কাজের তুলনা করলে কীভাবে হবে? নলেজ গ্যাপটা কে পূরণ করেছিল? কে প্রথমে আইডিয়া জেনারেট করল? এবং সাকসেসফুল্লি রান করেও দেখালো?"

আমরা এখন বুঝি যে কেন সজীব ভাই সব সময় আমাদের ২ জনের টিমে এক্সট্রা দলনেতা হয়ে উঠত, কেন চাইতো না যে আমরা কারো সাথে কথা বলি পিপীলিকা নিয়ে, কেন চাইতো না কেউ চিনুক বা জানুক আমাদেরকে? উত্তর সহজ - তাহলে তার নিজের জন্য সুবিধা হয়। সে পিপীলিকার ওউনার হয়ে উঠতে পারে এবং একভাবে পেরেছেও। সারাদেশের মানুষ তাকে চিনেছে, দেশে বিদেশে সে সুনাম কুড়িয়েছে এ নিয়ে। আমরা না থাকলে তো আর কেউ মাঠে নাই যে জানে আসলে কী হয়েছে। ফাকা মাঠে কে না গোল দিতে ভালোবাসে?